Health information to empower every pregnant woman speaking Bengali

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস থাকা অবস্থায় কি নরমাল ডেলিভারি সম্ভব?
উত্তর: জি সম্ভব! একজন ডায়াবেটিক গর্ভবতী মা ততটাই স্বাভাবিক ও সুস্থভাবে সন্তান প্রসব করতে পারে যতটা একজন ডায়াবেটিক না থাকা মা পারেন। শুনতে কিছুটা অবাক লাগলে ও এই কথাটির সত্যতা রয়েছে।
আজকের আর্টিকেল টি তে যা থাকছেঃ

  1. জেস্টেশনাল/গর্ভকালীন ডায়াবেটিস কি?
  2. এটি গর্ভাবস্থায় কত সপ্তাহ থেকে শুরু হয়?
  3. কি কারণে এটি হয়ে থাকে?
  4. কারা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন?
  5. কি ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়?
  6. এটি গর্ভস্থ সন্তানের কতটুকু ক্ষতি করতে পারে?
  7. এই ক্ষেত্রে কি কি চিকিৎসা আছে?
    জেস্টেশনাল/গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হল এক ধরনের টেম্পোরারি ডায়াবেটিস যা শুধুমাত্র গর্ভাবস্থায় দেখা দিতে পারে।বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডেলিভারির পর একজন গর্ভবতী মা আবারো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে। আমেরিকায় প্রতি বছর ১০% চাইল্ড বেয়ারিং নারী এই কন্ডিশনের মধ্য দিয়ে যান।
    মানুষের শরীরে প্রতিনিয়ত ইনসুলিন নামের একটি হরমোন প্রডিউস হয় যেটা ফ্যাট এবং কার্বোহাইড্রেট এর মেটাবোলিজমে সাহায্য করে এবং শরীরে থাকা সুগার কে এনার্জি তে রুপান্তার করে। কিন্তু একজন গর্ভবতী মা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন যখন তার শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন প্রডিউস করতে না পারায় রক্তে সুগার এর পরিমাণ বাড়িয়ে ফেলে।
    সাধারণত গর্ভকালীন সময়ের ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যে এটি শরীরে প্রকাশ পায়।এই সময়ে প্লাসেন্টা/গরভফুল বড় হয়ে প্রচুর পরিমাণে হরমোন রিলিজ করে যা কিনা ইনসুলিন এর স্বাভাবিক প্রোডাকশন কে ব্যাহত করতে পারে।
    কেন কিছু মা ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হয় আবার কিছু মা হয় না? এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত গবেষণা থেকে পরিষ্কার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে কারা এই ক্ষেত্রে ঝুঁকিতে থাকতে পারেন তা সম্পর্কে সম্ভাব্য কিছু ধারনা প্রমাণিত।
    • যদি আপনি ওভারোয়েট হয়ে থাকেন
    • আপনার পেটে উচ্চমাত্রায় ফ্যাট/ চর্বি জমা থাকে
    • আপনার বয়স ২৫-৩০ বছর এর ঊর্ধ্বে হয়ে থাকে
    • আপনার পরিবারের কোন সদস্যের এই কন্ডিশন থেকে থাকে।
    • আপনার পূর্ববর্তী গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস এর হিস্ট্রি থাকে।
    • যদি আপনি বর্ডার লাইন ডায়াবেটিক রোগী হয়ে থাকেন।
    • যদি আপনি ফুল বেডরেস্ট এ থাকেন।
    • হাই ব্লাড প্রেশার/ হৃদরোগ/ মেটাবলিক সিন্ড্রোম/ পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম এর কোন একটি তে যদি আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
    • টুইন /মাল্টিপল প্রেগন্যান্সি হয়ে থাকলে
    অনেক মা বুঝতেই পারেন না যে তিনি জেস্টেশনাল/গর্ভকালীন ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত।আবার অনেকেই মেডিকেল টেস্ট ছাড়াও কিছু উপসর্গ থেকে বিষয়টি আঁচ করতে পারেন। এর মধ্যে কিছু কমন উপসর্গ হলঃ
    • অনেক বেশি তৃষ্ণার্ত লাগা
    • মাত্রাতিরিক্ত ক্ষুধা লাগা
    • বার বার প্রস্রাব এর বেগ আসা
    • খুব বেশি ক্লান্ত লাগা
    • প্রস্রাবের সাথে সুগার যাওয়া
    জেস্টেশনাল/গর্ভকালীন ডায়াবেটিস কতটুকু ক্ষতিকর একজন মা অথবা গর্ভস্থ সন্তানের জন্য সেটাই এখন জানার বিষয়।উপযুক্ত চিকিৎসা এবং সময়ুপযোগি মনিটরিং করালে এটি মা এবং গর্ভস্থ সন্তানের কোন ক্ষতি ই করতে পারেনা বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা । কিন্তু যদি কেউ অবহেলায় মাত্রাতিরিক্ত সুগার লেভেল এ কোন কন্ট্রোল না আনেন তবে সেটা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। যেমনঃ
    • আনকন্ট্রোল্ড ডায়াবেটিস এর কারণে গর্ভস্থ সন্তান আকারে অনেক বড় হয়ে যেতে পারে সেক্ষেত্রে ন্যাচারাল ডেলিভারির পরিবর্তে সিজারিয়ান সেকশনের প্রয়োজন হতে পারে।
    • প্রি-একলাম্পশিয়া/প্রসব পূর্ববর্তী খিচুনি
    • ডেলিভারি পরবর্তী টাইপ ২ ডায়াবেটিস
    • মৃত সন্তান
    • শিশু জন্মের পর জন্ডিস/ব্রিদিং ডিফিকাল্টিস/টাইপ ২ ডায়াবেটিস
    তবে মনে রাখা জরুরি, যেসব মা ডায়াবেটিক অবস্থায় প্রোপার চিকিৎসা এবং রেগুলার মনিটরিং করেন তারা শুধুমাত্র গর্ভকালীন সময়কালেই স্বাভাবিক থাকেন তা নয়, বরং ন্যাচারাল ডেলিভারির জন্য ও ফিট হতে পারেন। আরও কিছু বিষয় মনে রাখা জরুরিঃ
    • যথাসম্ভব অয়াক্টিভ থাকা
    • স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়াঃ সহজ কথায় কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার গুল তে একটা লিমিট আনা, প্রোটিন আর হাই ফাইবার যুক্ত খাবার গুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়া। ৩ বেলা ভরা পেটে না খেয়ে ভাগ করে ৬/৭ বেলার ছোটো ছোট পরিমাণ করে খাওয়া।
    • ডাক্তার এর পরামর্শে সঠিক শারীরিক ওজন মেইন্টেইন করা।
    • যাদের ডায়াবেটিক কিছুটা আনকন্ট্রোল্ড তারা ইনসুলিন/ওষুধ নেয়ার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া।
    *** গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ে হবু মা দের ম্পধ্যে অনেকটা উদ্বিগ্ন হতে দেখা যায়। যদি ও এটি স্বাভাবিক গর্ভাবস্থায় তেমন খারাপ কোন প্রভাব ফেক্লে না বরং একটি নিয়মমাফিক লাইফস্টাইল এ আসতে বাদ্য করে তাই ভয় না পেয়ে ন্যাচারাল ডেলিভারি এর প্রস্তুতি নেয়াই উত্তম সিদ্ধান্ত হতে পারে।

Disclaimer: এই ইনফরমেশন গুলোর উদ্দেশ্য হলো স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো। তবে কোনো ভাবেই চিকিৎসার বিকল্প নয়। জানুন বুঝুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিন। আমাদের লেখায় যদি কোনো তথ্যগত ভুল বা বিভ্রান্তি থাকে তাহলে আমাদের ইনফর্ম করে ইম্প্রোভ করার সুযোগ করে দিন। যোগাযোগ: [email protected]

Share your comment :