গর্ভকালীন সময়ে সহবাস, কতটা নিরাপদ!!!
প্রেগন্যান্সির সময় সহবাস করা যায়কিনা এই নিয়ে স্বামি-স্ত্রীরির মধ্যে অনেক উৎকণ্ঠা কাজ করে। বিশেষ করে তাদের এই ন্যাচারাল চাহিদা যদি বাচ্চার ক্ষতি করে। মাতৃস্বাস্থ্য নিয়ে যারা গবেষণা করে বা স্বাস্থ্য তথ্য দিয়ে থাকে (যেমন যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস এবং আমেরিকান প্রেগন্যান্সি অ্যাসোসিয়েশন) তাদের মতে প্রেগন্যন্সির সময় সহবাস করা নিরাপদ এবং একটা সময় নরমাল ডেলিভারির জন্য সহায়ক। তবে হা কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রয়েছে। সেইক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শে চলা উচিত।
যেই বিষয়গুলো থাকলে ডাক্তার/মিডওয়াইফরা সহবাস করা থেকে বিরত থাকতে বলেন সেগুলো হলো :
- আপনার যদি আগে কোন প্রিম্যাচিঊর সন্তান জন্মদানের হিস্ট্রি থাকে
- পূর্ববর্তী কোন মিস্ক্যারিজ থাকলে
- আপনার যদি বর্তমান সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় পানি ভেঙ্গে যায়
- কোন কারণ ছাড়াই যদি ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং দেখা দেয়
- আপনার যদি প্লাসেন্টা প্রিভিয়া/ গর্ভফুল নিচের দিকে নামানো অবস্থায় থাকে
- আপনার সারভিক্স যদি দুর্বল/ডায়ালেটেড প্রকৃতির হয়
- আপনার হাসবেন্ড যদি সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের মতে, গর্ভকালীন সময়ে সহবাস বাচ্চার কোনো ক্ষতি করে না। বরং এটা প্রেগন্যান্সির আগের সময়কার মতোই নরমাল। একই তথ্য দিয়েছেন আমেরিকান প্রেগন্যান্সি অ্যাসোসিয়েশন। তাদের মতে, এই সময় সহবাস একদম নিরাপদ, কারণ গর্ভের সন্তান জরায়ুর ভেতরে একটি আবরণ বা থলের ভেতরে পানির মধ্যে ভাসতে থাকে। আর জরায়ুর মুখে মিঊকাস প্লাগ বলে এক প্রকার পিচ্ছিল থকথকে কন্টেন্ট দিয়ে সিল করা থাকে যা বাচ্চার হেল্প গার্ড হিসেবে কাজ করে এবং ইনফেকশন থেকে প্রোটেকশন দেয়।
তবে সহবাসের ক্ষেত্রে কমফোর্টেবল পজিশনের ব্যাপারে জোর দেয়া হয়। সনাতন পজিশন এই সময় টোটালি এভোয়েড করতে বলা হয়, কারণ এই পজিশনে গর্ভের সন্তান ঠিকমত অক্সিজেন /নিউট্রিশন সাপ্লিমেন্ট পায় না। আবার অনেকেই ভাবেন এই সময় বীর্য ভেতরে প্রবেশ করলে আবারো প্রেগন্যান্ট হওয়ার রিস্ক থাকে কিনা? সেক্ষেত্রে আমেরিকার হেলথলাইন বলছে, গর্ভকালীন সময়ে বীর্য একদমই নিরাপদ, কারণ অমনিয়টিক ফ্লুয়িড আর মিঊকাস প্লাগ শুধু ইনফেকশন থেকেই প্রোটেকশন দেয় না বরং বীর্য কে বলে “No Vacancy Here.”
কিন্তু বীর্য অনেক সময় কৃত্তিম ব্যাথার উদ্দ্রেগ করে বলে ৩০ সপ্তাহের পর থেকে ফুল টার্ম হওয়ার আগে পর্যন্ত এটি ভেতরে ফেলার ব্যাপারে কিছু নিষেধাজ্ঞা দেন আমেরিকান ডাক্তার/মিডওাইফরা। যে পরামর্শটা আমাদের দেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে ফুলটার্ম (৩৭ সপ্তাহ)হয়ে গেলে সহবাস করার প্রতি জোর দেয়া হয়, কারণ বীর্য এবং সহবাস ন্যাচারাল লেবারের (ব্যথা উঠার) জন্য সহায়ক হিসেবে কাজ করে। নিম্নে গর্ভকালীন সহবাসের আরো কিছু উপকারিতা তুলে ধরা হলো।
গর্ভকালীন সহবাসের উপকারিতাঃ
১। সহবাসের সময় অক্সিটোসিন নামক একটি হরমোন রিলিজ হয় যা ন্যাচারাল ডেলিভারির জন্য যে পেইন উঠা দরকার তার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আর বীর্যে থাকা প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন নামের হরমোন সারভিক্স রাইপ করতে সাহায্য করে।
২। এছাড়া মুড ভালো করতে এবং হৃদযন্ত্রের ব্লাড ফ্লো ঠিক রাখতেও সহবাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩। রিসেন্ট একটি স্টাডিতে পাওয়া গেছে, সহবাস ফার্স্ট টাইম মায়েদের ক্ষেত্রে প্রিএক্লাম্পসিয়ার/গর্ভকালীন খিচুনির রিস্ককে অনেকটা কমিয়ে ফেলে ।
গর্ভকালীন সময় মায়েদের স্বাস্থ্য অনেক ভঙ্গুর থাকে তাই যেকোনো পদক্ষেপ নেয়ার আগে ডাক্তার/ মিডওয়াইফদের পরামর্শ নেওয়া খুব জরুরি। কারণ তারাই আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো জানবেন।
Disclaimer: এই ইনফরমেশন গুলোর উদ্দেশ্য হলো স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো। তবে কোনো ভাবেই চিকিৎসার বিকল্প নয়। জানুন বুঝুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিন। আমাদের লেখায় যদি কোনো তথ্যগত ভুল বা বিভ্রান্তি থাকে তাহলে আমাদের ইনফর্ম করে ইম্প্রোভ করার সুযোগ করে দিন। যোগাযোগ: [email protected]
Share your comment :