Health information to empower every pregnant woman speaking Bengali

গর্ভাবস্থায় পানিভাঙ্গা কে প্রস্রাবের সাথে গুলিয়ে ফেলছেন না তো?

গর্ভাবস্থায় পানিভাঙ্গা কে প্রস্রাবের সাথে গুলিয়ে ফেলছেন না তো?

ছবিঃ ইন্টারনেট

গর্ভকালীন শেষ দিকের এই সময়ে পেলভিক ফ্লোর এর মাংসপেশি খানিকটা লুজ হয়ে যায় তাই প্রস্রাব ধরে রাখার কন্ট্রোল ও কিছুটা কমে যায়। হাঁচি/কাশি/দ্রুত হাটার সময় দুই এক ফোটা কাপড় এর সাথে লেগে ভেজা ভেজা অনুভব হলে অনেকেই ভেবে নেন যে তার পানি ভেঙ্গেছে। যা অনেক সময় দুঃশ্চিন্তার উদ্রেক করতে পারে। আবার অনেকে পানি ভাঙ্গলেও প্রস্রাব ভেবে ইগনোর করে যান যেটা কিনা অনাগত সন্তানের মারাত্মক ইনফেকশন এর কারন হতে পারে।

আজকের আর্টিকেল টি তে যা থাকছেঃ

  1. পানি ভাঙ্গা কি?
  2. গর্ভাবস্থার কোন সময়ে পানিভাঙ্গা স্বাভাবিক
  3. পানিভাঙ্গা নাকি প্রস্রাব কিভাবে বুঝবেন?
  4. পানি ভাঙ্গলে করনীয় কি?
  5. এই সময় বিপজ্জনক লক্ষন গুলো কি কি?
  6. সবার ক্ষেত্রেই কি ন্যাচারালী পানি ভাঙ্গে?

গর্ভাবস্থার পুরো সময় টাতে অনাগত সন্তান একটি পানির থলের মধ্যে ভাসতে থাকে। যেটা তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং প্রোটেকশন নিশ্চিত করে। এই পানি কে মেডিকেল এর ভাষায় অ্যামনিওটিক ফ্লুইড বলা হয়। বাচ্চা প্রসবের সময় হলে সাধারণত এই থলে ছিঁড়ে ফ্লুইড গুলো বের হয়ে আসে। এটা কেই গর্ভাবস্থার পানিভাঙ্গা/ ওয়াটার ব্রেক বলা হয়।

৩৭ সপ্তাহে গর্ভস্থ সন্তান বাইরের দুনিয়ায় সারভাইভ করার জন্য ম্যাচিউর হয়ে যায় অর্থাৎ এই সময় থেকে ৪০ সপ্তাহ/ডিউ ডেইট পর্যন্ত যেকোন সময় আপনার পানি ভাঙলে সেটাকে স্বাভাবিক বলে ধরা হয়। কিন্তু বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে এটি ৩৭ সপ্তাহের আগেও ভাঙ্গতে পারে। এই অবস্থা কে মেডিকেল এর ভাষায় প্রি-টার্ম প্রি-লেবার রাপচার অফ মেমব্রেন বলে। এতে অনাগত সন্তানের সাস্থ্যঝুকি ছাড়াও মা এর গর্ভফুল নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

যদি ৩৪ সপ্তাহে পানি ভাঙ্গার লক্ষণ থাকে এবং ইনফেকশনের ঝুঁকি থাকে তাহলে চিকিৎসক আপনার তাৎক্ষনিক সন্তান ডেলিভারি করে ফেলার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আবার যদি ২৪ থেকে ৩৪ সপ্তাহে হয় তাহলে চিকিৎসক আপনাকে অ্যান্টিবায়োটিক এবং স্টেরয়েড এর মাধ্যমে ইনফেকশন এর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবেন এবং বাচ্চার ফুসফুস ম্যাচিউরিটি তরান্বিত করবেন।

জেনে রাখা ভালো সময়ের আগে পানি ভাংলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রিটার্ম বার্থ এর রিস্ক থাকে।

পানি ভাঙ্গার সময় ঠিক কতটুকু পানি বের হতে পারে এটা বলা খুব কঠিন। এক জনের সাথে অন্য জনের অভিজ্ঞতা নাও মিলতে পারে। বুঝার সুবিধার্থে ধরে নিন কারো ক্ষেত্রে এক মগ পরিমাণ ফ্লুয়িড একসাথে বের হতে পারে যা কিনা কাপড় ভিজিয়ে ফ্লোরে এসে ও পড়তে পারে। আবার কারো ক্ষেত্রে ফোঁটায় ফোঁটায় পরার ও অভিজ্ঞতা রয়েছে।

এখন প্রশ্ন হল, প্রস্রাব থেকে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড কে আলাদা করে চিনবেন কিভাবে?

ফ্যাকাসে হলুদ রং এর হালকা গরম এবং মিষ্টি ঘ্রাণ যুক্ত/ছাড়া যে পানি বের হবে সেটাই অ্যামনিওটিক ফ্লুয়িড। অন্যদিকে প্রস্রাব হালকা গরম হলেও গন্ধ অ্যামোনিয়ার মত এবং কড়া হবে। অর্থাৎ গন্ধ দিয়ে আপনি এই দুটি কে আলদা করতে পারেন।

যখন আপনি নিশ্চিত যে আপনার পানি ভেঙ্গেছে তখন প্রথমেই চেষ্টা করুন শান্ত থাকার। এখন পর্যন্ত কোন ব্যাথা অনুভব না করলে ও আগামী ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনি প্রথম ব্যাথা/কন্ট্রাকশন অনুভব করতে পারেন। তাই, প্রথমেই আপনার চিকিৎসক কে বিষয়টি অবগত করুন। আপনার কন্ডিশন অনুযায়ী তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহন করবেন। এর মাঝে হাসপাতালের ব্যাগে নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো রেডি রাখুন। হালকা গরম পানিতে একটু বেশি সময় গোসল সেরে নিতে পারেন। এটা আপনাকে স্ট্রেস ফ্রি করতে সাহায্য করবে। হাসপাতালে পৌঁছানোর পর নির্দিষ্ট সময় অবজার্ভ করে যদি ব্যাথা না আসে তাহলে অনাকাঙ্ক্ষিত ইনফেকশন রোধ করতে আপনার চিকিৎসক লেবার ইন্ডিউস / ব্যাথা উঠানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

নিচের কোন একটি বিপজ্জনক চিহ্ন দেখলে চিকিৎসক কে দ্রুত জানানঃ

  • পানি ভাঙ্গার পর যদি সেটা সবুজ রং এর দুর্গন্ধ যুক্ত যুক্ত মনে হয় (সন্তান গর্ভে পায়খানা করলে পানির রং সবুজ এবং দুর্গন্ধ যুক্ত হয়)
  • যদি ৩৭ সপ্তাহের আগে আপনার পানি ভেংগে যায়
  • অল্প কিছু পানি ভাঙ্গার পরপর ই যদি বাচ্চার মাথা একদম নিচে নেমে যায়
  • ভ্যাজাইনাল এরিয়া তে যদি আম্বিলিকাল কর্ড/নাড়ি দেখতে পান

সবশেষে,ডেলিভারি এর আগে প্রত্যেক গর্ভবতী মা এর পানি ভাংবে এমন কোন থাম্ব রুল নেই। কারো ক্ষেত্রে আগে ব্যাথা/কন্ট্রাকশন শুরু হয়ে পরে পানি ভাংগে আবার কারো একেবারেই ভাংগে না, ডাক্তার/মিডওয়াইফ ডেলিভারির সময় আর্টিফিশিয়ালি ভেংগে দেন।

Disclaimer: এই ইনফরমেশন গুলোর উদ্দেশ্য হলো স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো। তবে কোনো ভাবেই চিকিৎসার বিকল্প নয়। জানুন বুঝুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিন। আমাদের লেখায় যদি কোনো তথ্যগত ভুল বা বিভ্রান্তি থাকে তাহলে আমাদের ইনফর্ম করে ইম্প্রোভ করার সুযোগ করে দিন। যোগাযোগ: [email protected]

Share your comment :