চিৎকার করে কাঁদতে থাকা নবজাতক কে মুহুর্তে শান্ত করতে পারে এক টুকরো কাপড়!
শুনতে অবাক লাগছে???
জন্মের পরেই সদ্যজাত শিশু কে কাপড় দিয়ে গলা থেকে পা অব্দি মুড়িয়ে আস্ত একটি পোটলা বানানোর এই পদ্ধতি কিন্তু প্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে। আধুনিক যুগে এর নাম দেয়া হয়েছে সোয়াডলিং!
গভীর ঘুমের মধ্য থেকে হঠাত হাত পা ছড়িয়ে চমকে/কেঁপে ঊঠা, সহজে ঘুমাতে না চাওয়া এবং কান্নাকাটি করা নবজাতক দের জন্য সোয়াডলিং অনেক টা ম্যজিক এর মত কাজ করে।
আজকের আর্টিকেল টি তে যা থাকছেঃ
- সোয়াডলিং কিভাবে কাজ করে?
- সোয়াডল করার পদ্ধতি গুলো কি?
- এটা কতটুকু নিরাপদ?
- কতদিন পর্যন্ত সোয়াডলিং করানো যায়?
দীর্ঘ ৪০ সপ্তাহ গর্ভে শিশুরা অ্যামনিওটিক স্যাক নামের একটি থলের ভিতরে গুটিসুটি হয়ে গরম পরিবেশে আরামের সাথে বেড়ে উঠতে থাকে। কখনো হাত পা গুলো ছড়িয়ে দেয় আবার কখনো সেগুলো গুটিয়ে একটা পোটলার মত হয়ে যায়। জন্মের সাথে সাথে শিশুটি তার সেই থলে থেকে বেড়িয়ে গেলেও হাত পা গুটিয়ে রাখার প্রবনতা থেকেই যায়। বাইরের দুনিয়ার সাথে সামঞ্জস্যতা আসতে ২/৩ মাস সময় লেগে যায়। সোয়াডলিং এর মাধ্যমে নবজাতক তার গর্ভে থাকার সেই আরামদায়ক অনুভূতি ফিরে পায়। আবার নিজেকে সুরক্ষিত মনে করে বলে এটা তাকে দ্রুত ঘুম পাড়াতে সাহায্য করে এবং ঘুমের মাঝে চমকে উঠার যে স্টারটল রিফ্লেক্স সেটা ও অনেকাংশে কমিয়ে দেয়।
লুজ কাপড় দিয়ে সোয়াডল করার পদ্ধতি খুব ই সহজ এবং সেটা কে আরো সহজ করতে বেশ কিছু রেডি সোয়াডল ও বাজারে অ্যাভাইলেবল। কাপড় দিয়ে করাতে চাইলে সঠিক কাপড় বেছে নেয়া খুব জরুরী। সুতি/মাসলিন জাতীয় কাপড় গুলো সোয়াডলের জন্য পারফেক্ট বলা হয়।
সোয়াডলিং এর পদ্ধতিঃ
একটি স্কয়ার/চারকোনা সমান কাপড় নিয়ে তার একটি কোন ভেতরে খানিকটা মুড়িয়ে তিন কোনা করুন। যারা হিজাব পড়ে অভ্যস্থ তাদের জন্য এই পদ্ধতি টি পরিচিত মনে হতে পারে।
ঠিক মাঝামাঝি তে বাচ্চা কে শুইয়ে ডান পাশের কাপড় দিয়ে হাত আর পেট মুড়িয়ে টেনে বাচ্চার বামপাশের পিঠের নিচে চাপিয়ে দিন। এরপর, পায়ের দিকের ছড়ানো কাপড় গুলোকে মুড়িয়ে উপরের দিকে টেনে ঠিক আগের জায়গায়(বাম পাশের পিঠের নিচে চাপিয়ে দিন। সবশেষে, বাঁকি যে বাম পাশের ছড়ানো কাপড় সেটা হাত আর পেটের উপর দিয়ে টেনে ডান পাশের বাহুর নিচে দিয়ে চেপে সেট করুন।
ব্যাস! বাচ্চা একদম প্যাকড আপ!
**বোঝার সুবিধার্থে ছবিতে খেয়াল করুন।
আমাদের দেশে সাধারনত বাচ্চাকে ঘুম পাড়ানোর সময় ছোটো কাঁথা/কম্বল দিয়ে বুক পর্যন্ত ঢেকে রাখা হয় আবার ঘুমের মাঝে চমকে যাওয়া (স্টারটল রিফ্লেক্স ) প্রতিরোধে বুকের উপর বালিশ দেয়া হয় যেটা খুব একটা নিরাপদ মাধ্যম নয় কেননা, বাচ্চা যেকোন সময় ঘুম থেকে উঠে পা ছড়াছড়ি করলে কাঁথা/বালিশ তার মুখের উপরে এসে সাফোকেশন তৈরি করতে পারে।
আমেরিকান একাডেমী অফ পেডিয়াট্রিকস এর মতে, সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করা হলে, সোয়াডলিং নবজাতক এর জন্য একটি পারফেক্ট সুদিং টেকনিক হতে পারে। আপনার করা সোয়াডলিং এর ব্যাবহার ঠিক কিনা এটা বুঝতে নিচের বিষয় গুলো খেয়াল করুনঃ
- সোয়াডল এর জন্য এমন কাপড় ব্যবহার করুন যেটা খুব একটা মোটা/গরম প্রকৃতির নয় এবং সহজে বাতাস আসা যাওয়া করতে পারে।
- সোয়াডলিং কখনো খুব বেশি টাইট আবার খুব বেশি লুজ করে করা উচিৎ নয়। কেননা, টাইট সোয়াডল এর কারণে বাচ্চা ওভারহিটিং ও অস্বস্তি অনুভব করতে পারে। আবার, বেশি ঢিলেঢালা হলে সেই কাপড় পেঁচিয়ে সাফোকেশন হতে পারে।
- এমন ভাবে সোয়াডল করুন যাতে বাচ্চা পা গুলো সুন্দর ভাবে ভিতরে সোজা/বাঁকা করতে পারে।
- সোয়াডল অবস্থায় বাচ্চা কে অবশ্যই চিৎ অবস্থায় শুয়ে রাখুন। সাইড অথবা উপুড় হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে অবশ্যই সোয়াডল করা থেকে বিরত থাকুন।
- রুমের তাপমাত্রা অতিরিক্ত গরম হলে সোয়াডল পরিহার করুন।
- বাচ্চার বয়স যদি 2 মাস হয় অথবা বাচ্চা যদি কাত/উপুড় হয় তাহলে সোয়াডল পরিহার করুন।
***প্রতিটি বাচ্চা আলাদা তাই তাদের ভালো লাগা/খারাপ লাগা গুলো ও আলাদা। সবাই যে সোয়াডল পছন্দ করবে তা নয়। জন্মের পর থেকেই এই পদ্ধতি শুরু করতে পারেন কিন্তু যদি আপনার নবজাতক সোয়াডল এর চেয়ে খোলা অবস্থায় ভালো বোধ করে তাহলে তা অবশ্যই পরিহার করুন।
Disclaimer: এই ইনফরমেশন গুলোর উদ্দেশ্য হলো স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো। তবে কোনো ভাবেই চিকিৎসার বিকল্প নয়। জানুন বুঝুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিন। আমাদের লেখায় যদি কোনো তথ্যগত ভুল বা বিভ্রান্তি থাকে তাহলে আমাদের ইনফর্ম করে ইম্প্রোভ করার সুযোগ করে দিন। যোগাযোগ: [email protected]
Share your comment :