Health information to empower every pregnant woman speaking Bengali

প্রেগন্যান্সি ডায়েট, যা গর্ভবতী মা ও অনাগত সন্তানের জন্য অপরিহার্য

প্রেগন্যান্সি ডায়েট, যা গর্ভবতী মা ও অনাগত সন্তানের জন্য অপরিহার্য

তখন বোধ হয় ক্লাশ ফোর এ পড়ি, আম্মার হঠাৎ ইচ্ছে হল আমাকে গলুমলু বানাবে। তাই, রুটিন করে এক গ্লাস দুধ আর একগাদা সবুজ শাক আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও খেতে হত।ঠিক এক সপ্তাহে বেড়ে গিয়েছিল দেড় কেজি ওজন! কিন্তু, দুধ পেটে পরা মাত্র কেমন জানি মোচড় দিয়ে উঠতো বলে প্রতিবার খাওয়ার আগে একরকম চিল্লাচিল্লি হতই । শেষমেশ মা আমাকে নিয়ে গেলো ডাক্তার এর কাছে। ডাক্তার বলে দিল, ‘যদি খেতে না চায় জোর করবেন না।’ যতই বলুক, তখন থেকে বড় হওয়া অব্দি মা কিন্তু হাল ছাড়েনি।

ঘটনাঃ ২
আন্ডারগ্রেড এর সময় সকালের প্রথম ক্লাশ শেষ করে এক কাপ চা যেন খেতেই হত। টং দোকানের চা এর ভ্যারাইটি জগৎ জোড়া ! সবাই দুধ চা অর্ডার দিলেও আমাদের এক ফ্রেন্ড কখনই তা নিতনা। জিজ্ঞেস করলে বলত “ভাই রে ভাই দুধ চা মুখে দিলেই পেটের মধ্যে খবর হইয়ে যায়!”
৬ বছরে কোনদিন তাকে আমি দুধ চা খেতে দেখিনি !

আপাত দৃষ্টিতে মিল্ক ফোবিয়া মনে হলেও মেডিকেল সায়েন্স এর ভাষায় এটাকে ল্যক্টোজ ইন্টলারেন্স বলে। সহজ কথায়, আমার এবং আমার ফ্রেন্ড এর পাকস্থলী, দুধের ভেতরে থাকা এক ধরনের মিষ্টি উপাদান (ল্যক্টোজ) হজম করতে সক্ষম নয়। তাই বলে ভাববেন না যে, আমরা দুজন ই শুধু এমন ইউনিক। হেলথ লাইন এর একটা রিসার্চ বলছে, পৃথিবী জুড়ে আনুমানিক ৭৫% মানুষ এই রোগে আক্রান্ত, যাদের মধ্যে আফ্রিকান এবং এশিয়ান তুলনামূলক ভাবে বেশী।

আদিকাল থেকে বিশ্বজুড়ে দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় খাদ্যকে উচ্চমানের পুষ্টিকর খাবার হিসেবেই ধরা হয়। মাত্র এক কাপ পরিমাণ দুধ খেলে আপনি পাবেন ১২ রকমের (Protein, Fat,Calcium, Vit-D, Riboflavin, Vit-B12, Potassium, phosphorus, Selenium, Vit-A, Zinc, magnesium and Thiamine) পুষ্টিকর উপাদান। আর যদি শুধুমাত্র অরগানিক/ ঘাস খায় এমন গরুর দুধ খেতে পারেন তাহলে তো কথায় নেই, আপনি এগিয়ে থাকবেঙ আরও দুইটি উচ্চমানের উপকারী Antioxidants নিয়ে।

এই বিষয়ে ইসলামিক ভিউঃ
The Prophet(ﷺ) said, “Verily, Allah Almighty did not place an ailment but that he also placed its cure. You should drink the milk of cows, for they are given health by all kinds of plants.”
এখন, হয়ত অনেকেই মনে মনে কস্ট পাচ্ছেন এই ভেবে যে, এত ভাল একটা খাবার কি আপনি খেতে পারবেন কিনা? তাদের জন্য কিছুটা স্বস্তির উত্তর হল – হ্যাঁ !

কিভাবেঃ

  • এনজাইম সাপ্লিমেন্টস – ট্যবলেট/ড্রপ ফর্মে ল্যক্টেজ এনজাইম ফার্মাসিতে আভাইলেবল। এটি একসাথে ৫০ গ্রাম পর্যন্ত ল্যক্টোজ হজমে সাহায্য করে।
  • ল্যক্টোজ এক্সপোজার – মনে আছে, আমার আম্মা যে হাল না ছেড়ে আমাকে একটু করে খাইয়ে গিয়েছে এতগুলো বছর এটাকেই বলে ল্যক্টোজ এক্সপোজার। অল্প অল্প করে রেগুলার বেসিস এ ট্রাই করতে থাকলে একসময় পাকস্থলী শিখে যায় কিভাবে ল্যক্টোজ হজম করতে হয়।
  • প্রোবায়োটিকস(উপকারী ব্যক্টেরিয়া) ইনটেক। এটিও ট্যবলেট ফর্মে পাওয়া যায়।
  • প্রিবায়োটিক্স (উপকারী ব্যক্টেরিয়া এর খাদ্য) ইনটেক। এই দুই প্রসেস অনেক ক্ষেত্রে ইফেক্টিভ হলে ও এদের ব্যপারে তেমন স্ট্রং কোন স্টাডি নেই।
  • আর যদি এগুলোর কোন কিছুই আপনার মানতে ইচ্ছে না হয় তাহলে বাজার থেকে ল্যক্টোজ ফ্রি দুধ কিনে খেতে পারেন(দাম টা একটু বেশি)। সেই দুধের পায়েস বানান, চা বানান কোন কিছুই আর আপনার পেট মোচড় এর কারন হবেনা।
  • উপরের প্রথম ৪ টি নিয়মাবলী ট্রাই করার আগে ডাক্তার এর পরামর্শ জরুরী*

আমি ফলো করেছিলাম ৫ নাম্বার টেকনিক টা। সকালে নাস্তার পর ১ গ্লাস আবার ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধ ছিল ম্যন্ডেটরি। কি একটা অবস্থা না? মেয়ে দুনিয়াতে আসার আগেই আমাকে লাইন এ নিয়ে আসছে! বড় হলে মনে হবে আর্মি র কমান্ডো ট্রেনিং এ আছি। শুধু দুধ খেয়ে বেঁচে গেছি এমন না! পুরো খাদ্যাভ্যাস আর লাইফস্টাইল কে চেঞ্জ করতে হয়েছে। তখনি তো মা হয়েছি… যখন অসহ্য লাগা খাবার টা হাসিমুখে খেয়েছি না দেখা একটা প্রাণের সুস্থ্যতার জন্য।

নিউট্রিশনিস্ট আমার একটা ওভারল ডায়েট প্লান সেট করে দিয়েছিল আর সাথে ইন্সট্রাকশন্স ছিল প্রতি ২ ঘণ্টা পর পর কিছু খাওয়ার। সব মিলিয়ে পুরো এক দিনে ৩ বেলার খাবার কে ভাগ করে ১০ বারে খেতাম। জেস্টেশনাল ডায়াবেটিকস আছে, খুব বেশি খেতে পারেন না অথবা আননেসেসারি ওজন বাড়াইতে চান না, হজমে সমস্যা আর খুব বেশি বমি সমস্যায় যারা ভোগেন তাদের জন্য এটা বেস্ট সমাধান হতে পারে।

খাদ্য তালিকা ও পুষ্টিগুণঃ
প্রথম ট্রাইমেস্টার(১-৩ মাস)ঃ

  • ফলমুল (ভিটামিন+মিনারেল)- ২ কাপ
  • শাক-সবজি (ভিটামিন+মিনারেল) – ২.৫ কাপ
  • রুটি/ভাত/সিরিয়াল (কার্বোহাইড্রেট) – ১৭৫ গ্রাম
  • মাছ/মাংস/ডাল (প্রোটিন)- ১৫৫ গ্রাম
  • দুধ/দুগ্ধ জাতীয় খাদ্য (ক্যলসিয়াম)- ৩ কাপ
    দ্বিতীয়+তৃতীয় ট্রাইমেস্টার(৪-৯ মাস)ঃ
  • ফলমুল (ভিটামিন+মিনারেল)- ২ কাপ
  • শাক-সবজি (ভিটামিন+মিনারেল)- ৩ কাপ
  • রুটি/ভাত/সিরিয়াল (কার্বোহাইড্রেট)- ২২৬ গ্রাম
  • মাছ/মাংস/ডাল (প্রোটিন)- ১৮৫ গ্রাম
  • দুধ/দুগ্ধ জাতীয় খাদ্য (ক্যলসিয়াম)- ৩ কাপ
    উপরের খাবার গুলো একভাবে না খেয়ে, বিভিন্ন ভাবে ট্রাই করতে পারেন। যেমনঃ
    ১ কাপ জুস
    ১/২ কাপ ড্রাই ফ্রুটস
    ২ কাপ ফ্রেস সবুজ শাক বা সালাদ
    ১ কাপ রান্না করা সবজি
    ১/২ কাপ ভাত/পাস্তা
    ১ কাপ সিরিয়াল
    ১ স্লাইস রুটি /পাউরুটি(লাল আটার)
    ২৮ গ্রাম মাছ/মাংস (চর্বি ছাড়া)
    ১/৪ ডাল, ১৪ গ্রাম বাদাম, ১ টা ডিম
    ১ কাপ দুধ
    ২২৬ গ্রাম দই
    ১৪ গ্রাম চিজ
    আরো ভালোভাবে বুঝতে নিচের ফটো তে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন।
    এগুলো তো নিয়মতান্ত্রিক খাবার, তাইলে নিজের শখের/স্বাদের কি কিছুই থাকবেনা? অবশ্যয় থাকবে তবে একটু হেলদি ওয়ে তে ।।
  • ফ্রাইড চিকেন না খেয়ে গ্রিল্ড চিকেন খেতে পারেন
  • ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস না খেয়ে ফ্রুট চাট খেতে পারেন
  • সোডা/ সফট ড্রিঙ্কস না নিয়ে ফ্রুট স্মুদি ট্রাই করতে পারেন।
  • বিভিন্য ধরনের সস খেতে কোন নিষেধ নাই।
    আমাদের দেশের খুব কমন কনসেপ্ট হল বাচ্চা পেটে সো চোখ বন্ধ করে খাও, যা মনে চায় খাও, বেশী করে খাও.. চেহারা ফোলাফোলা না হলে সে আবার কেমন গর্ভবতী? যেহেতু আমরা প্রতিনিয়ত অনলাইন এ থাকি, চাইলেই নিজের শরীর সম্পর্কে জানতে পারি। প্রতিটি মানুষ ই আলাদা তাই অন্যের সাথে আপনার সবকিছু মিলবে এমনটা নয়। তাই হতাশ না হয়ে প্লিজ নিজের আঙ্গিকে নিজেকে গড়ে তুলুন।

কতটুকু ওজন আপনি বাড়াবেন:
আপনি যদি আপনি বাড়াবেন
স্বাভাবিক ওজন এর ১২-১৬ কেজি
কম ওজন ১৩- ১৮ কেজি
বেশি ওজন ৭-১২ কেজি
প্রথম ৩ মাস মর্নিং সিকনেস এ জান টা বের হবার দশা সেখানে ওজন বাড়াতে হবে এই প্রেসার খুব পেরা দায়ক ! আমেরিকান প্রেগ্ন্যান্সি এসোসিয়েশন এর রিকমেডেশন অনুযায়ী প্রথম ৩ মাসে জাস্ট ১ থেকে দেড় কেজি বাড়লেই সেটাকে হেলদি ওয়েট গেইন বলা হয়।
তাই প্রেগন্যান্সির এই সোনালি সময় টা অযাচিত কথায় বিচলিত না হয়ে এনজয় করুন। বেশী বেশি ইবাদাত করুন। মনে রাখবেন, ইসলামে এই সময় টার গুরুত্ব অনেক।
Any woman who dies during her postpartum period or during pregnancy is a martyr, In sha’a-Allah (if Allah wills).
In the Hadith narrated by `Ubadah ibn Al-Samit

Disclaimer: এই ইনফরমেশন গুলোর উদ্দেশ্য হলো স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো। তবে কোনো ভাবেই চিকিৎসার বিকল্প নয়। জানুন বুঝুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিন। আমাদের লেখায় যদি কোনো তথ্যগত ভুল বা বিভ্রান্তি থাকে তাহলে আমাদের ইনফর্ম করে ইম্প্রোভ করার সুযোগ করে দিন। যোগাযোগ: [email protected]

Share your comment :