বেশী খারাপ লাগলে একটা গ্যাসের ট্যবলেট সেকলো খেতাম, না কমলে ডাবল ডোজ!!!
বেইলি রোডের শেষ মাথায়, ভিকারুন্নিসা স্কুল এন্ড কলেজ এর অপজিটে এক মামা স্যুপ আর চাপ বানাতেন। সুযোগ পেলেই যেয়ে গলা অব্দি খেয়ে আসতাম। সুযোগ না পেলে অন্যভাবে ব্যবস্থা করতাম। কাওকে সাথে পেলে ট্রিট দিতে নিয়ে যেতাম আর না পেলে নিজেই নিজেরে ট্রিট দিতাম। খাওয়ার পর পেটে কি অনুভব করতাম তা আর নাই বলি। জেনে রাখা ভালো যে সেই রাতে পেটে আর অন্য কিছু দেয়ার অবস্থা থাকতনা। বুক জ্বলা, পেট ভর্তি গ্যাস, বাজে ঢেকুর এগুলো হবে জেনেও অনেকটা গা ছাড়া ভাব দেখাতাম।
বেশী খারাপ লাগলে একটা গ্যাসের ট্যবলেট সেকলো খেতাম, না কমলে ডাবল ডোজ!
কনস্টিপেটেড?? এন্টাসিড ট্যবলেট, না হলে সিরাপ।
আমাষয়!!!! মেট্রোনিডাজল আছে না??
বদহজম ?? ডমপেরিডম ই ভরসা!!
আর যদি কোনো ভাবে ডায়রিয়া হয়েই যায় তবে স্যালাইন আর ডাবের পানি চালায়ে যেতাম । কাজ না হলে নিজেই হয়ে যেতাম ডাক্তার।এন্টিবায়োটিক সিপ্রোসিন শুরু করতাম যতক্ষণ টয়লেট বন্ধ না হয়। কোনো নিয়ম মেনে কোর্স কমপ্লিট করার তাগিদ ছিলনা।ওষুধ এর দোকানে ছিল আমার অবাধ বিচরণ। কোন ওষুধ চেয়ে পাইনি এমন হয়নি কখনো।
আমেরিকায় পা দিয়েই পরলাম দারুণ বিপদে! এখানে নাকি চাইলেই যেকোনো ওষুধ পাওয়া যায়না ! কিছুদিন দেশ থেকে আনা ওষুধ চালিয়ে গেছি কিন্তু কনসিভ করার পর বুঝেছি আসল কষ্টটা । মিডওয়াইফ আমাকে প্রথম তিন মাসের নিয়মাবলীর একটা চার্ট দিলেন যেখানে কিছু OTC Drug (যে ওষুধ ডাক্তার এর প্রেসক্রিপশন ছাড়াই খাওয়া যেতে পারে ) এর লিস্ট ছিল। আমি মহা আনন্দে একগাদা ওষুধ কিনে বাসায় রাখলাম। যখন morning sickness (বমি, মাথা ঘোরা আর গন্ধ ) আমার চরম মাত্রায় তখন নির্ধারিত একটা ওষুধ (Vit B6) আমি খাওয়া শুরু করলাম। একি! এটা কি আদৌ কাজ করে? কোন উন্নতি না বুঝে গ্যসের ট্যবলেট খেলাম। লিট্রেলি কোন কিছুই যেন আমাকে ছুঁয়েও যাচ্ছিলনা । মনে পড়ে গেল পিছনের কথা … না বুঝে কত ওষুধ এর এবিউজ ই না করেছি! এখন কি আর অল্পে কাজ হবে? পরে রিকুয়েস্ট করে অনেকটা বাড়িয়ে বলে মিডওয়াইফের কাছ থেকে কিছুটা পাওয়ারফুল ড্রাগ নিয়েছিলাম।
তখন থেকেই শুরু হল নিজেকে ন্যচারালি ভালো রাখার আপ্রাণ চেষ্টা। যারা মা হয়েছেন জেনে থাকবেন যে, প্রেগন্যন্সি তে কনস্টিপেশন কিছুটা জানে জিগার দোস্ত এর মত। পুরো নয় মাস আপনার সাথে থাকবেই। তাই ,কন্সটিপেশন আর গ্যস এর সহজ সমাধান হিসেবে বেছে নিলাম পানি। শুনতে খুব সহজ তাই না? কিন্তু আপনারা কয়জন মানতে পারেন এটা? প্রতিদিন এমন হয় না যে, কাল থেকেই ৮/১০ গ্লাস পানি ঢক ঢক করে খেয়ে ফেলবেন ? আমার ও এমন হত কিন্তু দিন শেষে হিসেব করে দেখি টেনে টুনে ২ গ্লাস!
বিষয়টা কে সিরিয়াসলি নিতে একটা বোতল সাথে রাখতাম সবসময়ের জন্য। কারনে অকারণে বোতলে চোখ পরলেই এক ঢোক ! ফলাফল পেতে দেরি হয়নি খুব একটা । আলহামদুলিল্লাহ্ !
শুধু পানি খেলেই হবে তা নয়, এই ক্ষেত্রেও কিছু নিয়ম অনুসরণ করা জরুরি।
livescience news বলছে,
*Drink a bottle of water about an hour before each meal to hold off thirst while you’re eating.
*At and around mealtimes, drink just enough to help your food go down. Drink in small sips, not large gulps, which can dilute your stomach acids, along with adding more air into your digestive system.
অর্থাৎ,
*প্রতিবার খাবার খাওয়ার কমপক্ষে এক ঘন্টা আগে অন্তত এক বোতল পানি খেয়ে নিন যাতে খাওয়ার সময়ের তৃস্নার্ত অনুভব না হয়।
*খাওয়ার মধ্যবর্তি সময়ে ততটুকুই পানি পান করুন যতটুকু আপনার গলা দিয়ে খাবার নামতে সাহায্য করে। ছোটো ছোটো চুমুক দিন, ঢক ঢক করে খাবেন না, কারন এটি আপনার ডাইজেস্টিভ সিস্টেমের ভেতর পাকস্থলির এসিডকে অতিরিক্ত বাতাসের সাথে মিশ্রিত করে যা গ্যাস সৃষ্টির কারন।
বিজ্ঞান এই তথ্য খুঁজে পেতে না জানি কত রিসার্চ করেছে কিন্তু, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ(সা:) আজ থেকে বহু বছর আগেই খাবার ও পানি খাওয়ার এটিকেট শিখিয়ে গেছেন। আসুন একটু চোখ বুলিয়ে নেইঃ
Prophet Muhammad (s:) said: “When commencing to drink first recite Bismillah.”
Prophet Muhammad (s:) said, “Never eat and drink with the left hand because Shaytaan (Satan) eats with the left hand.”
Prophet Muhammad (s:) said: “Sit down and drink.” (Hadith Muslim) and also said: “None of you should drink while standing; and if anyone forgets, he must vomit.”
Prophet Muhammad (s:) said, “Do not drink water only in one breath, but drink it in two or three breaths.”
Abdullah Bin Abbas (Radi Allahu anhuma) narrates the Prophet of Allah (Sallallaho Alaihi Wasallam) said, “Do not blow from your mouth into food and water.”
Prophet Muhammad (s:) said: “Recite ‘Bismillah’ before drinking and say ‘Alhamdulillah’ after drinking.”
এতক্ষণে আপনি হয়ত মনে মনে রেগুলার পানি খাওয়ার জন্য মোটামুটি নিজেকে সেট করে ফেলেছেন। তাইলে, এই সুযোগে আমি HEALTHLINE এর কিছু সহজ টিপস দিয়ে দেই যেগুলো আপনাকে আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবে ইনশা আল্লাহ্ !
- পানি খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা গুলো অনুধাবন করুন
- একটি ডেইলি লক্ষ্য স্থির করুন
- রিইউজেবল পানির বোতল সাথে রাখুন
- রিমাইন্ডার সেট করুন
- সোডা/সফট ড্রিঙ্কস এর বদলে পানি খেতে পারেন
- পানির একঘিয়েমি স্বাদ বদলাতে ইনফিউসড ওয়াটার পান করতে পারেন (বোতল ভর্তি পানিতে যেই ফল পছন্দ সেটা স্লাইস করে কেটে ৪/৫ ঘণ্টা রাখলে সেটাকে ইনফিউজড ওয়াটার বলে)
- সারাদিন একটু পর পর এ বোতলে চুমুক দিন
- পানিযুক্ত খাবার খান (লেটুস, তরমুজ, জুকিনি, বাঙ্গি, বাঁধাকপি এবং নাশপাতি)
সবশেষে বলতে চাই, পানি বেশীর ভাগ মানুষের জন্য জীবন হলেও কারো কারো (কিডনি এফেক্টেড, ইলেক্ট্রোলাইট ইম্ব্যলান্স রোগী)জন্য মরণের কারন হতে পারে। বেশী পানি পান করলে ওয়াটার ইন্টক্সিকেশন এর ঝুঁকি থাকে । তাই, আগে নিজের শরীর সম্পর্কে জানুন এবং অবশ্যই যেকোনো স্টেপ নেয়ার আগে ডাক্তার এর পরামর্শ নিন।
বিঃ দ্রঃ একটি সুস্থ্য সন্তান সবার কাম্য। কিন্তু ভুল তথ্য/ কুসংস্কার হতে পারে আপনার ও আপনার অনাগত সন্তানের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারন। আমার সময়ে আমি সবসময় চেষ্টা করেছি নিজে জানার, কিন্তু সেটা সহজ ছিলনা। তাই আমি আমার প্রেগ্ন্যান্সি এক্সপেরিয়েন্স গুলো বাংলায় শেয়ার করছি যাতে আমার মত অন্যকে বেগ না পেতে হয়। American pregnancy association এবং আমার OB-GYN যেই রিসোর্স গুলো দিয়েছেন আমি সেগুলো থেকেই তথ্য শেয়ার করি।
Disclaimer: এই ইনফরমেশন গুলোর উদ্দেশ্য হলো স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো। তবে কোনো ভাবেই চিকিৎসার বিকল্প নয়। জানুন বুঝুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিন। আমাদের লেখায় যদি কোনো তথ্যগত ভুল বা বিভ্রান্তি থাকে তাহলে আমাদের ইনফর্ম করে ইম্প্রোভ করার সুযোগ করে দিন। যোগাযোগ: [email protected]
Share your comment :