“মা” হওয়ার সেই রুপকথা! আমেরিকান এক মায়ের গল্পানুসারে
” গ্রোসারি করতে গেলে আজকে যে কাজ হবে না তা আমার মাথায় রাখা উচিৎ ছিল।”২ মাস বয়সী ছেলে জুজু কে বাজার করা কার্টে বসাতে বসাতে লিলি নিজের সাথেই গজগজ করছিল! এরই মধ্যে জুজু ঘ্যানঘেনে আওয়াজ করা শুরু করে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত সে শব্দ করে না কাঁদলেও খুব বেশি যে সময় নিবেনা তাও লিলি জানে। এমব্যারেজড আর গিল্টি ফিল করে সে এবার এদিক ওদিকে তাকালো। বাজারের কার্টে এখনো একটা আইটেম ও তোলা হয়নি অথচ জুজু এতটুকু তেই এমন করছে ভেবে একপ্রকার অসহায় বোধ হল তার।
ঘড়িতে একবার চোখ বুলিয়ে দেখে প্রায় ২:৩০ বাজে। এখন আর কোন সন্দেহ ই নাই যে জুজু বিরক্ত। কেননা এই সময় টা তার ক্রিব এ ঘুমিয়ে থাকার কথা!
লিলি সামনে এগুচ্ছে আর ভাবছে…
” বাচ্চার খাওয়া আর ঘুমানোর পর গ্রোসারি তে আসতে আসতেই অর্ধেকটা দিন চলে গেল!! আসলে হচ্ছে টা কি আমার সাথে? যখন থেকে মা হয়েছি সময়ের উপর যেন কোন কন্ট্রোল ই নাই আমার। আগে যেকোন কাজের সুন্দর গোছানো লিস্ট করে রাখার অভ্যাস ছিল। প্রেগন্যন্সির সময় টা ভাবতাম যে, বাচ্চা আসার পর সারাদিন কাজ করেও অনেকগুলো সময় আমি ফ্রি কাটাতে পারব। আর সারাদিন বাচ্চার সাথে খেলব আর খেলব! আর এখন জেসন কে রেখে যে একা কিছু কিনতে যাব এটা ভাবতেও অবাক লাগে! “
আচমকা সম্ভিত ফিরে পেয়ে সে একটা তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিল। এই অবস্থায় যদি শপিং লিস্ট থেকে অর্ধেক দরকারি জিনিস যেমন: দুধ, ডায়াপার এবং রাতের খাবার এর জন্য কিছু ফ্রোজেন ফুড ও কিনে তাহলে হয়ত অল্প সময়ে বাসায় ফিরতে পারবে।
সেটা ভাবেই আর কি কি আছে লিস্টে তা একবার দেখে নিতে চাইলো। কিন্তু, আয় হায়! লিস্ট টা কোথায়? সে এলোপাথাড়ি তার পার্স এ খুঁজতে লাগলো। খুঁজে না পেয়ে তার মনে পড়ল হয়ত কিচেন এ ফেলে এসেছে!
এবার সে কার্ট টা তারাতারি ঠেলতে লাগলো।
গ্রোসারি স্টোর টা আজ বেশ ভরা, তবুও কোন মতে দুধ এর প্যাকেট গুলো কার্টে উঠাতে পেরেছে। এরই মধ্যে জুজু চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করেছে। যেটা শুনে ৩০ ফিট দুরে থাকা মানুষ গুলো বার বার তার দিকে তাকাচ্ছে। এদিকে লিলি অস্বস্তি তে পড়ে প্রানপনে কান্না থামানোর চেস্টা করতে লাগলো। ছোটো খাটো এক প্রকার যুদ্ধ শেষে চেকআউট করে সে দ্রুত গাড়ির দিকে রওনা হল। জুজু কে কার-সিটে বসিয়ে গ্রোসারি গুলো ব্যাক ডালায় রাখল। এরপর পুরো রাস্তা এক হাতে গাড়ি চালিয়ে আর এক হাতে জুজু এর মুখে হাত বুলাতে বুলাতে বাসায় পৌছাল। গাড়ি বাসার সামনে থামতেই জুজুর ঘুম ভেংগে গেল! আচমকা ঘুম ভাংগায় এবার সেই চিৎকার হয়ে গেল দ্বিগুন!
লিলি এখন গ্রোসারি নিবে নাকি জুজু কে তারাতারি রুমে নিয়ে চেঞ্জ করে খাইয়ে ঘুমিয়ে দিবে? আবার ডিনার ও তৈরি করতে হবে ও ঘুম থেকে উঠার আগেই। লিলি সব ভাবনা বাদ দিয়ে শুধু জুজু কে কোলে নিয়ে তার সাথে ডায়াপার আর পার্স টা কে অন্য কাধে নিল আর সোজা সিঁড়ি তে চলে গেল।
উপরে উঠে সবকিছু ডাইনিং টেবিল এর উপর রেখে সোজা চলে গেল নার্সিং রুমে।
সুন্দর গোঁছানো এই নার্সিং রুমটা কল্পনার মত করেই সে সাজিয়েছিল। যেখানে ক্রিব টা ঘিরে আছে ড্রিমি মস্কিটো নেইট আর অনেক গুলো স্ট্রিং লাইট। উপর থেকে ঝুলানো কিছু টয় টিং টাং করে বাজতে থাকে সারাক্ষন! তার অন্য পাশে আছে একটা চেঞ্জিং টেবিল ওটাতে জুজু র ডায়াপার চেঞ্জ করা হয়। সেখানে ডায়াপার, ওয়াইপস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার আর চেঞ্জিং ক্লথ গুলো সাজানো থাকে। চেঞ্জিং শেষে পাশে রাখা রকিং চেয়ারে দুলতে দুলতে জুজুকে সে খাওয়াবে। সাথে সাথে সেও খানিক ক্ষন ঘুমিয়ে নিবে। এমনই রিল্যাক্সিং সময় সে প্রেগন্যান্ট থাকা কালীন কল্পনা করে এসেছে।
কিন্তু এখন কেন জানি সে সবকিছু থেকেও রিল্যাক্স হতে পারছেনা।
গাড়িতে রাখা ফ্রোজেন খাবার গুলো ফ্রিজে তারাতারি সাজানো দরকার সেগুলো হয়ত গলা শুরু করেছে…
ক্ষুধা পেয়েছে অথচ ডিনার বানানো দেরি হয়ে যাচ্ছে…
অনেকগুলো জমানো কাপড় লন্ড্রি করা বাকি আছে…
এসব ভাবনা গুলো এক হয়ে তাকে অস্থির করে তুলেছে।
আগের ভাবা সুখের স্ম্রৃতির সাথে বাস্তবতার বিস্তর ভিন্নতা দেখে হঠাৎ ই তার চোখ পানিতে ভরে গেল। অনেকটা ক্লান্তি বোধ তাকে মুহুর্তেই ঘিরে ধরলো। এই ক্লান্তির সাথে আত্ববিশ্বাস হীনতা আর একাকীত্ব বোধ ও তাকে চেপে ধরতে লাগল।
লিলি ভাবতো “মা” হওয়া সে খুব ভালোভাবে হ্যান্ডেল করবে সাথে উপভোগ ও করবে। কিন্তু, এখন সে ভিন্ন চিত্রের সম্মুখীন!
আবার, সে এটাও জানে জুজুর নরম গালে টোল পড়া সেই হাসি, ছোট্ট আংগুল গুলো দিয়ে তার হাত টা চেপে ধরা, ইয়াপ্পি বলে উপরের দিকে হাত বাড়িয়ে কোলে উঠার বাহানা তাকে আবারো ফুল রিচার্জ করে তুলবে। ২৪ ঘন্টার পরিশ্রম কে ভুলিয়ে দিবে মুহুর্তেই! তার জন্য বাঁচতে ইচ্ছে করবে হাজারো বছর।
” মা ” হওয়ার পর জীবন টা হয়ত রুপকথার মত সাজানো হয় না! হোক সেটা নিজের দেশে অথবা বাইরের কোন দেশে। সন্তান শুধু খুশি নিয়ে সংসার পরিপুর্ন করে তাই নয় বরং অনেক বড় মাপের দায়িত্ব ও সাথে নিয়ে আসে। এইক্ষেত্রে, মায়েরা তাদের সর্বোচ্চ দিয়ে সেই দায়িত্ব পালন করার চেস্টা করেন। যা তাদের কল্পনা এবং বাস্তবতার উপর বড় রকমের প্রভাব ফেলে। কোন কোন মা চলে যান ডিপ্রেশন এ আবার কোন মা সন্তান কে মারধর করে নিজেই অপরাধ বোধে ভোগেন! আমি নিজে ও এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি এবং চেষ্টা করে যাচ্ছি ব্যাল্যান্স লাইফ লিড করার।
” মা “হিসেবে আপনারা কি কল্পনা আর বাস্তব অভিজ্ঞতায় মিল পেয়েছিলেন? শেয়ার করুন আপনাদের অভিজ্ঞতাও!!!
Disclaimer: এই ইনফরমেশন গুলোর উদ্দেশ্য হলো স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো। তবে কোনো ভাবেই চিকিৎসার বিকল্প নয়। জানুন বুঝুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিন। আমাদের লেখায় যদি কোনো তথ্যগত ভুল বা বিভ্রান্তি থাকে তাহলে আমাদের ইনফর্ম করে ইম্প্রোভ করার সুযোগ করে দিন। যোগাযোগ: [email protected]
Share your comment :