Health information to empower every pregnant woman speaking Bengali

হ্যান্ড, ফুট, মাউথ ডিজিজ, ৫ বছরের নিচের শিশুদের নতুন রোগ

হ্যান্ড, ফুট, মাউথ ডিজিজ, ৫ বছরের নিচের শিশুদের নতুন রোগ

হাতে পায়ে মুখে এবং ডায়াপার এরিয়া তে ফোস্কার মত র‍্যাশ যেটা কে অনেকেই পক্স মনে করে ইগনোর করছেন আসলে সেটা হ্যান্ড ফুট মাউথ ডিজিজ। অতিমাত্রায় ছোঁয়াচে এই রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় ৫ বছরের কম বয়সী বাচ্চারা, কিন্তু অনেক সময় বড়দের ক্ষেত্রেও রোগটি দেখা দিতে পারে।

আজকের আর্টিকেল টি তে যা থাকছেঃ

• হ্যান্ড ফুট মাউথ ডিজিজ কেন হয় ?
• এটার লক্ষণ গুলো কি কি ?
• কি ধরনের চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব ?
• কখন জরুরী ভিত্তিতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন ?
• হ্যান্ড ফুট মাউথ ডিজিজ অন্য কি ধরনের জটিল অসুখের কারণ হতে পারে?
হ্যান্ড ফুট মাউথ ডিজিজ নামটি অনেকের কাছেই নতুন হলেও আসলে এটি প্রতি বছরের গ্রীষ্মকাল এবং শিতের শুরুর দিকে অনেক বেশী মাত্রায় দেখা দেয়। এই রোগের মেইন কালপ্রিট হল এন্টেরো ভাইরাস।
একই ফ্যামিলি থেকে উদ্ভুগ্ধ দুই ধরনের ভাইরাস বিশ্বের দুই প্রান্তে রোগ ছড়ানোর কাজে নিয়জিত আছে।
কক্সাকি ভাইরাস A-16 আমেরিকার সর্বত্র এখন রোগ ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে।
আর এন্টেরো ভাইরাস 71 দায়িত্ব নিয়েছে ইস্ট এবং সাউথ ইস্ট এশিয়ার। অর্থাৎ বাংলাদেশে এখন যে হঠাৎ হ্যান্ড ফুট মাউথ ডিজিজ এর প্রকোপ দেখা দিয়েছে তা মূলত এই এন্টেরো 71 ভাইরাসের কারনে।
আক্রান্ত শিশুর হাঁচি কাশি, মুখ/নাকের লালা, মিউকাস ড্রপ্লেটস এবং পায়খানা থেকে এই রোগ ছড়াতে পারে। শরীরে উঠা ফোস্কার মত র‍্যাশ গুলো ফেটে ও এই রোগের সংক্রমন হতে পারে। আবার আক্রান্ত শিশুকে কে ছুঁলে, কোলে নিলেও এই রোগ হওয়ার সভাবনা থাকে।
হ্যান্ড ফুট মাউথ ডিজিজ হলে প্রথমেই বাচ্চার উচ্চমাত্রার জ্বর আসতে পারে। গলা ব্যাথার সাথে হাত,পা এবং মুখের আশে পাশে ফোস্কা/ লালচে র‍্যাশ উঠার কারনে বাচ্চা খাবার খাওয়ায় অনীহা প্রকাশ করতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে আবার মুখ দিয়ে লালা পড়ার ও লক্ষন থাকতে পারে। সব মিলিয়ে বাচ্চা প্রচন্ড দুর্বল অনুভব করা সহ সারাদিনের বেশির ভাগ সময় ঘুমিয়ে থাকতে পারে।
উপরের লক্ষন গুলো সব মিলিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন স্থায়ী হতে পারে।
এই রোগ প্রানঘাতী নয় তাই প্রথমেই চেস্টা করুন প্যানিক না করে ধৈর্য সহকারে কিছু ঘরোয়া নিয়ম পালন করার। আপনার লক্ষ্য হবে, সন্তান এর জ্বরের মাত্রা কমিয়ে আনা এবং তার শরীরে পানির পরিমান যাতে কমে না যায় সেটা খেয়াল রাখা।
১। প্রতিবার ব্রেস্টফিড/খাওয়ানোর আগে বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা মেপে নিন। জ্বর যদি ১০০.৪ এর উপরে হয় তাহলে কুসুম গরম পানিতে সুতি কাপড় ভিজিয়ে পুরো শরীর আর মুখমন্ডল মুছিয়ে দিন।
২। চিকিৎসক এর পরামর্ষ অনুযায়ী বাচ্চাকে ইনফেন্টাইল প্যারাসিটামল সাস্পেনশন খাওয়ান।
৩। জ্বর আসলে বাচ্চাকে গরম কাপড়ে মুড়িয়ে রাখবেন না, এতে শরীরের তাপমাত্রা আরো বেড়ে যেতে পারে।
৪। ঘরের জানালা দরজা খোলা রাখুন, যাতে বাতাস ঠিকমত আসা যাওয়া করতে পারে। যারা দেশের বাইরে আছেন, তারা এই সময় টাতে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন। এতে বদ্ধ ঘরে বাতাস গুলো ফিল্টার হয় এবং পর্যাপ্ত আদ্রতা বজায় থাকে।
৫। এই সময় বাচ্চা খেতে না চাইলে জোরাজুরি করবেন না। ব্রেস্টফিডিং এ জোর দিন। এই সময় তার শরীরে পানির মাত্রা বজায় রাখতে আগের চেয়ে বেশি বেশি ব্রেস্টফিড করান।
৬। ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে শরীরে এই সময় প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি দরকার হয়। যেহেতু বাচ্চা এই সময় শুধু বুকের দুধ নির্ভরশীল তাই আপনি নিজে চেস্টা করুন বেশী মাত্রায় ভিটামিন সি জাতীয় খাবার/পানীয় খেতে।
৭। বাচ্চাকে প্রতিদিন কুসুম গরম পানিতে গোসল করিয়ে দিন। এতে বাচ্চার বুকে কফ জমার আশংকা কিছুটা কমে যায়।
৮। শরীরে উঠা র‍্যাশ গুলো কিছুটা যন্ত্রনাদায়ক হতে পারে তবে সময়ের সাথে সাথে এটা নিজে থেকেই শুকিয়ে আসবে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়াতে এই সময়ে কোন ধরনের সোপ/শ্যাম্পু ব্যাবহার করা থেকে বিরত থাকুন। অনেক সময় চিকিৎসক এই র‍্যাশ চিকিৎসায় হাইড্রোকর্টিসোন ১% প্রেসক্রাইব করে থাকেন।
৯। এই কয়টা দিন, বাচ্চাকে বেশি বেশি সময় দিন। তাকে বেশি হামাগুড়ি/দৌড় ঝাপ খেলতে দিবেন না। বই পড়া/ বসে থেকে খেলা যায় এমন খেলনা দিয়ে তাকে সুস্থ হবার সুযোগ দিন। বিস্রাম সুস্থ্যতার অন্যতম একটি চাবিকাঠি ।
যেহেতু এই রোগ মারাত্মক ছোঁয়াচে তাই চেস্টা করুন যথাসম্ভব ঘরেই থাকার।
কিছু কিছু সময় সিচুয়েশন আউট অফ কন্ট্রোল হয়ে যায়, সে সময়ে ঘরে বসে থাকলে বিপদের আশংকা থাকে। তাই, হ্যান্ড ফুট মাউথ ডিজিজ আক্রান্ত শিশুর ক্ষেত্রে নিচের কোন একটি ঘটলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোনঃ
• বাচ্চার জ্বর যদি ১০২ এর উপরে হয় এবং তা কোনভাবেই কন্ট্রোলে না আসে।
• কাঁদলে যদি চোখ দিয়ে পানি না পড়ে অথবা মুখ থেকে স্বাভাবিক লালা না আসে।
• দিন বাড়ার সাথেসাথে যদি সব লক্ষন গুলো আরো খারাপের দিকে যায়।
• বাচ্চার বয়স যদি ৬ মাসের নিচে হয়ে থাকে।
যদিও এই রোগ প্রাণঘাতী নয় তবে, পরিচর্যা আর সচেতনতার অভাবে ঘটতে পারে অনেক বড় অঘটন ! যেমনঃ
• ডিহাইড্রেশন
• ফিঙ্গার নেইল/ টো নেইল লস
• ভাইরাল মেনিনজাইটিস
• এনসেফালাইটিস/ প্যারালাইসিস
তাই সচেতন হোন। নিজে জানুন, অন্যকে জানাতে সাহায্য করুন।

Disclaimer: এই ইনফরমেশন গুলোর উদ্দেশ্য হলো স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো। তবে কোনো ভাবেই চিকিৎসার বিকল্প নয়। জানুন বুঝুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিন। আমাদের লেখায় যদি কোনো তথ্যগত ভুল বা বিভ্রান্তি থাকে তাহলে আমাদের ইনফর্ম করে ইম্প্রোভ করার সুযোগ করে দিন। যোগাযোগ: [email protected]

Share your comment :