সন্তান নেয়ার প্ল্যান যারা করছেন তাদের প্রস্তুতি কেমন !!!
না! আমি টাকা পয়সা, চাকরি অথবা বাসার ক্যাপাসিটি নিয়ে কথা বলছিনা।
ছোট্ট একটি ভ্রূণ যেই গর্ভে একটু একটু করে বড় হবে আমি সেই শরীরের প্রস্তুতির কথা বলছি।
প্রি-প্রেগন্যান্সি প্রিপারেশন হয়ত অনাগত সন্তানের চোখগুলো দেখতে কার মত হবে সেই ধারনা দিবেনা কিন্তু কিছু বংশগত রোগ, মিস্ক্যারিজ এবং অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঝুঁকি এড়াতে সাহায্য করবে।আবার যদি কেউ ইনফারটিলিটি জনিত সমস্যায় ভোগেন তবে এই প্রস্তুতি আপনার সন্তান কন্সিভ করার সম্ভাবনা কে বাড়িয়ে তুলে পারে।
আজকের আর্টিকেল এ যা থাকছেঃ
১। প্রি-প্রেগন্যান্সি প্রিপারেশন কি?
২। এটা কতদিন আগে থেকে শুরু করা যায়?
৩। এটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ?
৪। প্রস্তুতির মধ্যে কি কি আছে?
৫। এই ব্যাপারে কোন বিশেষজ্ঞ কে দেখাতে পারেন?
গর্ভকালীন সময়ের আগের প্রস্তুতি কে প্রি-প্রেগন্যান্সি প্রিপারেশন বলা হয়। অর্থাৎ আপনি যদি সন্তান নেয়ার ব্যাপারে মনস্থির করেন তাহলে সে সময় থেকে কিছু অভ্যাসগত পরিবর্তন অথবা খাদ্যাভ্যাস এর সংযোজন শুরু করা যা আপনার শরীরের অভ্যন্তরীণ ফাংশন গুলোকে স্বাভাবিক ভাবে পরিচালিত করতে সাহায্য করবে। সাথে অনাগত সন্তানের জন্য গর্ভে একটি পারফেক্ট রুম তৈরি করবে যেখানে আপনার বুকের ধন ৯ টা মাস আরামে আয়েশে কাটিয়ে দিতে পারে।
কোথাও ১ বছর আবার কোথাও ৬ মাস আগে থেকে প্রস্তুতির কথা বলা হলেও, অন্তত ৩ মাস আগে থেকে স্টেপ নেওয়া কে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ রা।
অনুকূল পরিবেশ না পেলে যেমন মাটি থেকে বীজ হয়ত চারা হয়ে উঠে কিন্তু গঠন ও মানগত দিক থেকে এগিয়ে থাকে সার পাউশ মেশানো মাটির চারাটি ই। তেমনি, একটি ভ্রূণ যখন তৈরি হয় দুর্বল শুক্রাণু+ডিম্বাণু থেকে তখন তার সারভাইভাল আর প্রতিকূলতার সাথে ফাইট করার স্ট্রেনথ তুলনামূলক কম থাকে। এখন, অনেকের মনে হয়ত প্রশ্ন জাগছে যে, আগের যুগের মানুষ তো এত কিছু জানা বা মানার কথা ভাবেও নি তাহলে কি সেই জেনারেশন এর মধ্যে গঠনগত কোন ঘাটতি ছিল ? জেনারেল ভিউ থেকে দেখলে সহজেই এর উত্তর পাওয়া সম্ভব। পূর্বে আধুনিকায়ন/প্রযুক্তিগত বিষয়ের এঙ্গেজমেন্ট কম ছিল বলে নারী পুরুষ মানসিক ভাবে ততটা স্ট্রেসড ফিল করত না। আবার, তাজা শাক সবজি আর ফ্রেস খাবার এর কারণে পুস্টিগত বিষয়েও তারা ছিল তুলনামুলকভাবে এগিয়ে। প্রক্ষান্তরে, এই সময়ে নারী পুরুষের ঘরে ও বাইরে শারীরিক ও মানসিক কাজের চাপ এবং খাদ্যতালিকায় ফ্রোজেন ফুড এর আধিক্য শরীর ও মনকে করছে দুর্বল। তাই, এই প্রি-প্রেগন্যান্সি প্রিপারেশন সবদিক থেকে দুটি মানুষকে তৈরি করতে পারে একটি সুস্থ প্রজন্ম জন্মদানের।
এখন জেনে নিন কি কি করতে হবেঃ
১। প্রথমেই একজন ডাক্তার/মিডওয়াইফ এর সাথে কন্সাল্ট করুন। যিনি আপনাকে প্রেগ্ন্যান্সি পূর্ববর্তী ভ্যাক্সিন, টেস্ট, প্রিন্যাটাল ভিটামিন আর হেলদি ওয়েট সম্পর্কে অ্যাডভাইস করবেন। তাছাড়া ও কোন ঔষধ গুলো আগে থেকেই খাওয়া বাদ দেয়া অথবা কি কি অল্টারনেট মেডিসিন প্রয়োজন সে সম্পর্কেও অবগত করবেন।
২। হৃদযন্ত্রের ব্লাড সার্কুলেশন ঠিক রাখতে শুরু করতে পারেন প্রতিদিন ৩০ মিনিটের ব্যায়াম। তাছাড়াও শরীর কে সচল রাখতে হাঁটা, সাইকেল চালানো অথবা সাঁতার কাটা হতে পারে গ্রেট ওয়ার্কআউট।
৩। খুব দ্রুত হয়ত আপনার আঁচার আর আইসক্রিম খাওয়ার ক্রেভিং হতে পারে তাই অন্তত এখন কিছুটা ভালো খাবারে মন দিন। প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, আয়রন , ক্যালসিয়াম আর ফলিক এসিড প্রয়োজন আপনার সুতরাং, ফল, বাদাম, সবুজ শাক-সবজি, গমের আটার রুটি, লাল চালের ভাত এবং দুগ্ধজাতীয় (লো ফ্যাট ) খাবার খেতে পারেন। আপাতত চিপস, কোমল পানীয় আর ফাস্ট ফূড কে ছুটি জানিয়ে দিন। হবু বাবা, আপনি ও শুরু করতে পারেন, যাতে আপনার সহধর্মিণী বোর না ফিল করে।
৪। ফলিক এসিড খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি নিউট্রিয়েন্ট যা অনাগত সন্তানের জন্মগত বিভিন্ন ত্রুটি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ভিটামিন বি যুক্ত খাবার যেমন, পালং শাক, শিমের বিচি তে পর্যাপ্ত পরিমাণে এটি পাওয়া যায়। যেহেতু গর্ভকালীন সময়ে শরীরে প্রতিটি নিউট্রিয়েন্ট প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজন হয় তাই শুধু খাবার থেকে সেটি পূরণ করা সম্ভব হয় না। তাই, আলাদা কিছু মাল্টিভিটামিন ডাক্তার/ মিডওয়াইফ প্রেসক্রাইব করে থাকেন। আর প্রস্তুতির সময়কাল থেকেই ডাক্তার এর পরামর্শে প্রতিদিন ৪০০ মাইক্রোগ্রামস এর ফলিক এসিড ট্যাবলেট শুরু করতে পারেন।
৫।অতিরিক্ত আন্ডার/ওভার ওয়েট দুটিই সন্তান কন্সিভ এর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই একটি হেলদি ওয়েট এর ব্যাপারে সতর্ক হোন। আপনার জন্য কোনটি হেলদি ওয়েট সেই ব্যাপারে আপনার ডাক্তার/মিডওয়াইফ কে জিজ্ঞাসা করুন।
৬। একটি খুব সাধারণ ব্লাড/ স্যালাইভা টেস্ট থেকে আপনি জানতে পারবেন আপনি কি কোন জীন শরীরে বহন করছেন যা কিনা সিস্টিক ফাইব্রোসিস, ফ্র্যাজাইল এক্স সিন্ড্রোম অথবা সিকেল সেল ডিজিজ এর কারণ হতে পারে। ডাক্তার আপনার ফ্যামিলি হিস্ট্রি এর উপর বেইজ করে সেই টেস্ট গুলো রেকোমেন্ড করতে পারেন।
৭।আপনি হয়ত আপনার দাঁতের ব্যাপারে তেমন কেয়ারফুল নন, কিন্তু সন্তান এর প্ল্যান করলে আজ থেকেই দাঁতের যত্ন নিন এবং প্রয়োজনে ডেন্টিস্ট এর সাথে যোগাযোগ করুন। কেননা, প্রেগন্যনসি তে দাঁতের মাড়ি খুব সহজেই রোগাক্রান্ত হয় যা অনেক সময় প্রি ম্যাচিউর/আর্লি লেবার এর কারণ হতে পারে।
৮। আপনি কি চা/ কফি পাগল মানুষ? একটু কষ্ট হলেও এই অভ্যাসে কিছুটা পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। কারণ, অত্যাধিক পরিমাণে ক্যাফেইন আপনার হ্রিদস্পন্দন এবং ব্লাড প্রেশার বাড়ানো ছাড়া ও অনাগত সন্তান এর স্বাভাবিক ঘুমের প্যাটার্ন কে ব্যাহত করতে পারে। বিভিন্ন মতামত/স্টাডি থাকলে ও ১৫০/২০০ মিলিগ্রাম এর বেশী ক্যফেইন ইনটেক করাকে ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।
৯। হবু বাবা, আপনি কি ধূমপানে অভ্যস্ত? যদি সন্তান নেয়ার ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে থাকেন তবে ধূমপান পরিত্যাগ করার এখনই সময়। কারণ আপনার অনাগত সন্তান প্যাসিভলি স্মোক করলে, মিসক্যারিজ, লো-বারথ ওয়েট, প্রি-ম্যাচিউর লেবার, লার্নিং/বিহ্যাভিওরাল ডেফিসিয়েন্সি দেখা দিতে পারে।
১০। সবশেষে, হানিমুন এর নাম হয়ত শুনেছেন সবাই , কিন্তু বেবি মুন এর সাথে কি আপনি পরিচিত? কন্সিভ করার আগে কোথাও থেকে ঘুরে আসা, যেখানে হয়ত নবজাতক নিয়ে যাওয়া কষ্টকর, সেই ট্যুর কেই বেবি মুন বলে। শুনতে অনেকটা ফেন্সি হলেও স্ট্রেস কমিয়ে এটি সন্তান কন্সিভ হতে এটি দারুণ উপযোগী একটি পন্থা হতে পারে। নতুন বাবা মা হওয়া অনেক দায়িত্বের তাই কিছুটা সময় নিজেরা কাটিয়ে নিতে পারেন।
কোন বিশেষজ্ঞ কে দেখাবেনঃ
১। একজন অবস্টেট্রিশিয়ান-গাইনেকোলোজিস্টঃ যিনি হাই এবং লো রিস্ক প্রেগন্যান্সি দুটিই ম্যানেজ করেন।
২। মিডওয়াইফঃ যিনি ওবি ডাক্তার এর মতই সার্ভিস দেন (নন-সারজিকাল এনভায়রনমেন্টে ) কিন্তু লো-রিস্ক প্রেগ্ন্যন্সি কেস গুলোতে। মিডওয়াইফ গন সিজারিয়ান সেকশন পারফর্ম করেন না তবে প্রয়োজন বোধে জটিল কেস গুলো ওবি ডাক্তার কে রেফার করেন।
সবাইকে আগামী দিনের জন্য শুভকামনা!
Disclaimer: এই ইনফরমেশন গুলোর উদ্দেশ্য হলো স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো। তবে কোনো ভাবেই চিকিৎসার বিকল্প নয়। জানুন বুঝুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিন। আমাদের লেখায় যদি কোনো তথ্যগত ভুল বা বিভ্রান্তি থাকে তাহলে আমাদের ইনফর্ম করে ইম্প্রোভ করার সুযোগ করে দিন। যোগাযোগ: [email protected]
Share your comment :